সমাস কাকে বলে ? সমাস নির্ণয় করার নিঞ্জা টেকনিক ?

সমাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি?



 আজকের আলোচলার মাধ্যমে আমরা জানবো বাংলা ব্যাকারণ "সমাস" সম্পর্কে । অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছেন যারা সমাস এত একটা বুঝেন না । তাদেরে জন্য আজকের আলোচনাটি হবে অনেক ফলপ্রসূ । আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে জানতে পারবেন  "সমাস কাকে বলে-সমাস কত প্রকার ও কি কি" একথায় সমাস সম্পর্কিত বিস্তারিত । আজকের এই লিখাটি মুনযোগ দিয়ে আপনিও সমাস সম্পর্কে দক্ষ হয়ে উঠবেন । আসুন নিচে থেকে জানি - সমাস কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি ? 



সমাস কাকে বলে ? 



সমাস  :- অর্থসম্বন্ধ করে এমন দুই বা ততোধিক শব্দ একত্রে মিলিত হয়ে একটি পদ বা নতুন শব্দ গঠনকেই সমাস বলে । সমাস শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সংক্ষিপ্তকরণ । আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে একই অর্থ বহন করে এমন দুই বা তার অধিক শব্দ  মিলিত হয়ে সংক্ষেপে শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াই হলো সমাস । সমাসের রীতি বাংলা ভাষায় যুক্ত হয়েছে সংস্কৃত থেকে । সসাস বাংলা ব্যাকারণের রূপতত্ত্বের একটি অংশ । এটি সাধারাণত বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বাক্যকে সহজ ,সরস ,মধুর এবং ছন্দময় করতে সমাস এর ব্যবহার হয়ে থাকে ।  ভাষাবিধগন নানাভাবে সমাসকে  সংঙ্গায়িত করেছে ।  দুই বা ততোধিক পদ একত্রিত হয়ে  এক পদে রুপান্তর হয় এবং অর্থবোধক পদ সৃষ্টি করে ,সেই সাথে পদের বিভক্তি লোপ পায় ,তাকেই সমাস বলে । আবার পরষ্পর অর্থসম্বন্ধ দুই বা ততোধিক পদের সামষ্টিক রূপই হলো সমাস ।

যেমন - দেশের সেবা = দেশসেবা , বটের তলা = বটতলা . সিংহ চিহ্নন আসন = সিংহাসন ।



সমাস কত প্রকার  ও কি কি ?


সমাসের প্রকারভেদ :- সমাস সাধারণত ৬ প্রকার । আসুন নিচে থেকে ৬ প্রকার সমাসের নাম জানি ।

১. দ্বন্দ্ব সমাস 

২. কর্মধারয় সমাস 

৩. তৎপুরুষ  সমাস 

৪. বহুব্রীহি সমাস 

৫. দ্বিগু সমাস 

৬. অব্যয়ীভাব সমাস 


দ্বন্দ্ব সমাস 


দ্বন্দ্ব সমাস :- যে সমাসে একই অর্থবহ দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে এক পদে রূপান্তরিত হয় তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে । দ্বন্দ্ব সমাস চিনার উপায় হলো, দ্বন্দ্ব সমাসে এবং,ও,আর এই তিনটি অব্যয় পদ ব্যাসবাক্যের পূর্বপদ ও পরপদের মধ্যবর্তী স্থানে ব্যবহৃত হয় । এখানে উভয় পদকে প্রধান্য দেওয়া হয় । ব্যাসবাক্যের পূর্বপদ এবং পরপদের কোন বিভক্তি থাকবে না ,আর দুইটি পদই বিশেষ্য হয় ।যেমন - মা ও বাবা = মা-বাবা এখানে ব্যাসবাক্যের পূর্ব পদ "মা" , পরপদ "বাবা" এর মাঝখানে "ও" অব্যয়টি ব্যবহৃত হয়েছে । "মা"  ও "বাবা" উভয় পদই  প্রধান্য দেওয়া হয়েছে । আর পদ দুইটিই বিশেষ্য পদ । তাই "মা ও বাবা= মা-বাবা " দ্বন্দ্ব সমাস ।



আরো উদাহরণ 

  • মা ও বাবা = মা-বাবা
  • জন্ম ও মৃত্যু = জন্ম-মৃত্যু
  • দা ও কুমড়া = দা- কুমড়া 



দ্বন্দ্ব সমাসকে আবার কয়েক প্রকারের হয় । যেমন - 


  • সাধারণ দ্বন্দ্ব 
  • মিলনার্থক দ্বন্দ্ব 
  • বিরোধার্থক দ্বন্দ্ব 
  • সংখ্যা বাচক দ্বন্দ্ব 
  • অলুক দ্বন্দ্ব
  • একশেষ দ্বন্দ্ব 
  • সমার্থক দ্বন্দ্ব
  • বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব
  • প্রায় সমার্থক দ্বন্দ্ব
  • বহুপদী দ্বন্দ্ব 


কর্মধারায় সমাস 


কর্মধারায় সমাস :-  যে সমাসের ব্যাসবাক্যে বিশেষণ পদের সাথে বিশেষ্য পদ মিলিত হয়ে সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়  তাকেই কর্মধারয় সমাস বলে । যেমন - "নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম"  এখানে "নীল" হলো বিশেষণ আর "পদ্ম" হলো বিশেষ্য । এখানে পরপদ "পদ্ম" প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়েছে । তাছাড়াও ব্যাসবাক্যে যদি দুইটি বিশেষ্য থাকে এবং বিশেষ্য পদের অর্থ দুইটি একই ব্যাক্তিকে নির্দেশ করে তাহলেও এটি কর্মধারায় সমাস হবে । যেমন - " যিনি জজ তিনি সাহেব = জজ সাহেব " । কর্মধারায় সমাসের বেশির ভাগ ব্যাসবাক্যেই  ,ন্যায় , রূপ ,যে ,যিনি ,যেটি  ব্যবহৃত হয় এবং ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ লোপ পায় ।



আরো উদাহরণ


  • মহান যে রাজা = মহারাজ 
  • সুন্দীরী যে লতা = সুন্দরলতা 
  • মন রূও মাঝি = মনমাঝি
  • মুখ চন্দ্রের ন্যায় = মুখচন্দ্র

কর্মধারায় সমাস ৪ প্রকার । যথা- 


  • উপমান কর্মধারায় সমাস 
  • উপমিত কর্মধারায় সমাস 
  • রূপক কর্মধারায় সমাস 
  • মধ্যপদলো্পী কর্মধারায় সমাস 


তৎপুরুষ সমাস 


তৎপুরুষ সমাস:- যে সমাসের ব্যাসবাক্যে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পেয়ে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে প্রতীয়মান হয় তাকেই তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন - বিপদকে আপনড়ব = বিপদাপনড়ব ।


আরো উদারণ 

  • চায়ের বাগান =  চাবাগান 
  • চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী 
  • যথা- ন আচার = অনাচার


তৎপুরুষ সমাস আবার কয়েক প্রকার । যথা-


  • নঞ্চ তৎপুরুষ সমাস 
  • উপপদ তৎপুরুষ সমাস 
  • দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস 
  • তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস 
  • চতুর্থী তৎপুরুষ 
  • পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস 
  • সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস 
  • অলুল তৎপুরুষ সমাস 



বহুব্রীহি সমাস 


বহুব্রীহি সমাস:- যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে , আলাদা বা অন্য কোন পদকে বুঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন - বহুব্রীহি আছে যার = বহুব্রীহি ।


আরো উদাহরণ 

  •  খোশ মেজাজ যার = খোশমেজাজ 
  • দু কান কাটা যার = দু কানকাটা 
  • আশীতে বিষ যার = আশীবিষ 

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ । যথা - 


  • সমানাধিকরণ বহুব্রীহি 
  • ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি 
  • ব্যতিহার বহুব্রীহি 
  • ন্ঞ্চ বহুব্রীহি 
  • মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি 
  • সংখ্যাবাচক বহুব্রাহি 


দ্বিগু সমাস 


দ্বিগু সমাস :-   সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে বিশেষ্য পদ যুক্ত হয়ে যে সমাস গঠিত হয় তাকেই দ্বিগু সমাস বলে । দ্বিগু সমাস সমাহার বা যোগফল বুঝিয়ে থাকে । যেমন - চৌ মাথার সমাহার = চৌমাথা ।


আরো উদারণ 

  • তিন ভুজের সমাহার = ত্রিভুজ 
  • তিন প্রান্তের সমাহার = তেপান্তর 
  • তে মাথার সমাহার = তেমাথা 



অব্যয়ীভাব সমাস 


অব্যয়ীভাব সমাস :-  যে সামাসে অব্যয়ের অর্থ প্রধান রূপে প্রধান্যপায় তাকে তাকেই অব্যয়ীভাব সমাস বলে । এই সমাসে অব্যয়ের অর্থ কেন্দ্র করে ব্যাসবাক্যটি গঠিত হয়ে থাকে । যেমন - মরণ পর্যন্ত = আমরণ ।


আরো উদাহরণ 


  • কন্ঠের সমীপে = উপকন্ঠ
  • দিন দিন =  প্রতিদিন 
  • আমিষের অভাব = নিরামিষ 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.