যে সকল নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত গুলো একদিনে চট্রগ্রাম ভ্রমন করার মাধ্যমে দেখতে পারবেন

 দেশের প্রকৃতিক সৌন্দর্যের আদরের দোলালি বলা যায় চট্রগ্রামকে । আয়তনের দিক দিয়ে ঢাকা শহরের পরেই বন্দরনগরী চট্রগ্রাম এর অবস্থান । কোলাহল ও ব্যস্ত নগরী হিসাবে ঢাকার সাথে কিছুটা মিল থাকলেও ,প্রকৃতিক সৌন্দর্যে দিক দিয়ে চট্রগ্রাম এক ধাপ এগিয়ে । তাই তো বন্দরনগরীতে ছুটে আসেন সবাই সস্তি এবং প্রকৃতির কাছা-কাছি আসার জন্য । অনেকে‌ই  আছেন যারা যান্ত্রিক জীবনকে বেগবান করতে একদিনে চট্রগ্রাম ভ্রমন করতে আসেন । তাদের জন্যই আমাদের এই ব্লকটি । আজকের এই ব্লকে আমরা তুলে ধরবো , চট্রগ্রামে গিয়ে একদিনে সে সকল নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত গুলো ঘুরে আসতে পারবেন । এখানে উল্লেখিত সবগুলো সমুদ্রসৈকতই চট্রগ্রাম শহর থেকে কাছা-কাছি স্থানে অবস্থিত । 

চট্রগ্রামে ছোট বড় অনেক গুলো সমুদ্রসৈকত আছে । যার একটির রূপ অন্যটি থেকে ভিন্ন । এদের মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা , নেভাল , গুলিয়াখালী , পারকি ও বাঁশখালী , সমুদ্রসৈকত । নিম্ন উক্ত আলোচনায় আমরা এসব সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে জানবো । 


পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত 

পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত 


সবার কাছে অতিপরিচিত সমুদ্রসৈকত হলো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত । যারা চট্রগ্রাম ভ্রমণে যাবেন তারা কম আর বেশি সবাই পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সম্পর্কে অবগত আছেন । তারপরও জেনে রাখা ভালো যে , পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বন্দরনগরী চট্রগ্রাম থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত । চট্রগ্রাম বিমানবন্দর ও নৌবাহিনীর নেভাল একাডিমির কাছেই পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এর অবস্থান । সম্প্রতি এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে নির্মান করেছেন চট্রগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ ( সিডিএ )। 

জোয়ারের সময় প্রবহমান বাতাস আপনার মনের ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দিবে । তাছাড়া ওয়াকওয়ের রঙ্গিন ইটে বসে উপভোগ করতে পারবেন চট্রগ্রামে বন্দরে ভেসে ভেড়ানো ছোট বড় জাহাজের সমারোহের  আপরূপ দৃশ্য । ছোট - বড় জাহাজের মধ্য দিয়ে সূর্যাঅস্থের মনোরম দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবেই । এই জায়গার সৌন্দর্য্য আরো দ্বিগুন হয় সন্ধ্যাই । যখন জাহাজ গুলোতে আলো জ্বলে উঠে । সমুদ্র ঢেউ এর কলকল ধ্বনি , হুহু করা বাতাস , আর দূরে ভেসে থাকা জাহাজগুলোর  জলন্ত লাইট যখন সন্ধ্যার পর ওয়াকওয়ের নিচে  কৃত্রিম পাথরগুলোতে বসে উপভোগ করবেন তখন আপনার মনে হবে এখানেই থেকে যায় সারা জীবন এর জন্য । তাছাড়াও আপনি দিনের বেলায় এই সমুদ্রসৈকতে আপনার গাঁ ভিজাতে পারবেন । দেশের প্রথম টানেল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পাড়েই অবস্থিত ।

ওয়াকওয়ের বিপরীত দিকে র‍য়েছে স্ট্রিট ফুডের সারি সারি দোকান । এগুলো থেকে আপনি স্ট্রিট ফুড়ের স্বাদ গ্রহন করতে পারবেন । এখানে স্ট্রিট ফুড গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাঁকড়া ভাজা , পিয়াজু , নানা প্রজাতির মাছ । তবে বলে রাখা ভালো এখানে খাবার এর দাম তুলনা মূলক বেশি । তাই খাবার খাওয়ার আগেই অবশ্যই যাচাই - বাচাই করে খাবেন । 

চট্রগ্রাম শহর থেকে আপনি অটোরিকশা বা সিএনজি করে আপনি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আসতে পারেন। শহরের মূল প্রান কেন্দ্র জিইসি থেকে ১০ নাম্বার বাসে করেও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে আসা যায়  । আর অলংকার থেকে চড়তে পারবেন ৮ নাম্বার বাসে । বাসে ভাড়া পরবে জনপ্রতি ৫০ টাকার মতো । আর সিএনজি রিজার্ভ করলে ভাড়া নিবে ৪০০ টাকার মতো । এখানে উল্লেখিত ভাড়া স্থান কাল ভেদে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে ।   


নেভাল সমুদ্রসৈকত 

নেভাল সমুদ্রসৈকত


 পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের  পূর্ব দিকে নেভাল সমুদ্রসৈকতের অবস্থান । এটি ও শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরেই  অবস্থিত । নেভাল সমুদ্রসৈকত এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নৌবাহিনীর শিক্ষানবিশ ক্যাডেটদের । সবুজে ঘেরা এই সমুদ্রসৈকতটি যে কারোই নজর কারবে দেখলে মনে হবে প্রকৃতির সব সৌন্দর্য্য যেন ছুয়ে ছুয়ে পড়ছে । 

তবে নেভাল সমুদ্রসৈকতে প্রবেশ অধিকার সবার নাই । বিশেষ পারমিশন এর মাধ্যমে  নেভাল সমুদ্রসৈকতে প্রবেশ করতে হয় । তবে হতাশ হওয়ার কিছু নাই । সরকারি প্রতিষ্ঠান এর শেষের দিক শুরু করে বিমানবন্দর পর্যন্ত নেভাল সমুদ্রসৈকতের এরিয়া সবার জন্য উম্মুক্ত ।  শহর থেকে ছুটির দিনে আবকাশ যাপনের জন্য অনেকেই এসে থাকে । তাই ছুটির দিনে এই সৈকতে মানুষের উঠছে পড়া ভিড় হয় । এখানেও খাবার জন্য স্ট্রিট ফুড এর দোকান রয়েছে । তবে এখানকার স্ট্রিট ফুড এর দাম পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে কিছুটা কম । 

নেভাল বিচে যেতে আপনাকে ফ্রিপোর্ট থেকে বাসে বা লেগুনা ছড়ে আসতে হবে । চাইলে সিএনজি নিয়েও আসতে পারেন । বাসে ভাড়া পড়বে ফ্রিপোর্ট থেকে ২০ টাকা করে । আর সিনজি নিলে ২০০ টাকার মতো পড়বে । পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকেও  অটো করে নেভাল বিচে আসতে পারবেন । এই ক্ষেত্র অটোর ভাড়া পরবে পার জন ২০ টাকা করে । 


গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত 

গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত


গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত চট্রগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়  পড়ছে । সীতাকুন্ড বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এর অবস্থান । গুলিয়াখালী নামে এটি সবার কাছে পরিচিত হলেও এর আরেকটি নাম রয়েছে সেটি হলো মুরাদপুর সমুদ্রসৈকত । 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য  দিয়ে তুলনা করলে গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত অন্যান্য সমুদ্রসৈকত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । এর পশ্চিমে রয়েছে সাগর এর বিশালতা , ঢেউর পর ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্রসৈকতে । নজর কাড়া সবুজে ঘেরা সারি সারি পাহাড় চোখে পড়বে এর পূর্ব দিকে তাকালে । এখানে দেখা মিলবে কেওড়া বনের বিশাল সমারোহ । বনের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় অনেক খাল । খালের চারদিকে নজরে পড়বে কেওড়া গাছের শ্বাস মূল । আর এই বন এতটাই বড় যে এটি সমুদ্রের গভীর পর্যন্ত বিসৃত । একে অন্য সৈকতে থেকে ভিন্ন করে এর সৈকত জোড়ে গালিচার মতো জন্ম নেওয়া সবুজ গাছ গুলো । এই সবুজের বুকে রয়েছে ছোট ছোট অনেক নালা । জোয়ারের সময় নালা গুলোতে পানি জমে । তখন এই সৈকতের রূপ আরো একঅংশ বেড়ে যায় । 

চট্রগ্রাম শহর থেকে আপনি গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে  যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে অলংকার মোড়ে । সেখান থেকে বাসে করে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাসস্টেশনে । বাস ভাড়া পরবে জনপ্রতি ৫০ টাকার মতো । তারপর সীতাকুন্ড নামা বাজার থেকে সিনজি যোগে সরাসরি যেতে পারবেন গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে । সিনজি ভাড়া পরবে নামা বাজার থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা করে । এখানে উল্লেখিত ভাড়া স্থান ,কাল ভেদে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে । 


পারকি সমুদ্রসৈকত 

পারকি সমুদ্রসৈকত


পারকি সমুদ্র সৈকত চট্রগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিনে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত । এই সমুদ্রসৈকতের আয়তন প্রায় ১৩ কিলোমিটার । এটি একটি উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত । 

পারকি সমুদ্রসৈকত দেখতে কিছুটা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতোই । এখানে রয়েছে ঝাউবনের বিশাল প্রভাব । পুরো বীচ জুড়ে চোখে পরবে ঝাউ গাছ । তাছাড়া পারকি সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার সময় চারপাশের পরিবেশটা আপনাকে বিমুখিত করবে । চারপাশে পাহাড়ের সারি আর সবুজের মিলন মেলা যত দেখবেন ততই বিমোখিত হবেন । পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার সময় কর্নফুলী নদীর উপর নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ চোখে পড়বে । 

আপনি পারকি সমুদ্রসৈকতে যেতে পারেন দুই ভাবে । প্রথমত আপনি চট্রগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গা ১৫ নং জেটি ঘাট আসতে হবে । ১৫ নং জেটি ঘাটে এসে কর্নফুলী নদী পাড় হয়ে আটোরিকশা বা সিনজি যোগে ডাইরেক্ট আসতে পরবেন পারকি সমুদ্রসৈকতে । আরেকভাবে আসতে পারেন চট্রগ্রাম শহর থেকে ডাইরেক্ট আনোয়ারা বাসট্যান্ড পৌছে সেখান থেকে সিনজি / অটোরিকশা নিয়ে । 


বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত 

বাশবাডিয়া সমুদ্রসৈকত


চট্রগ্রাম বিভাগের বাশখালী উপজেলায় বাশঁবাড়িয়া সমুদ্রসৈকত অবস্থিত । এটি চট্রগ্রাম শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এটি সবার কাছে আরেকটি নামেও পরিচিত সেটি হলো বাহারছড়া সমুদ্রসৈকত । এটি আয়তনের দিক থেকে কক্সবাজার এর পরেই এর স্থান । এর আয়তন প্রায় ৩৭ কিলোমিটার । 

এই সৈকতের মূল আকর্ষন হলো লাল কাঁকড়া । এখানে লাল কাঁকড়ার জাক দেখতে পাবেন বিশেষ করে সকালে । তাছাড়াও এই সমুদ্রসৈকত থেকে সূর্যাস্ত ভালোভাবে দেখা যায় । এই সমুদ্রসৈকতটি শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থির বলে এতে জনসমাগম কিছুটা কম হয় ।

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতে আসতে হলে আপনাকে প্রথমে চট্রগ্রাম শহরের নতুন ব্রিজ / বহাদ্দাহাট বাসস্টেশনে আসতে হবে । সেখান থেকে বাসে করে বা সিনজি করে আসতে হবে গুনাগরি বাজার । গুনাগরি বাজার থেকে সিনজি যোগে পৌছতে পারবেন বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতে । 


উপরোক্ত সবগুলো সমুদ্রসৈকতই একদিনে আপনি চাইলে ভ্রমণ করতে  পারবেন । তাই চট্রগ্রামের নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করার জন্য একদিনের জন্য চট্রগ্রাম ভ্রমনে আসলে এই সমুদ্রসৈকত গুলো দেখতে পারবেন । 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.