কাশ্মীরের সৌন্দর্য যে কাউকে বিমোহিত করবে

 কাশ্মীর 


ভারতীয় উপমহাদেশের ঠিক উত্তর -পশ্চিমের একটি স্বর্গীয় অঞ্চল হলো কাশ্মীর ।সংস্কৃত শব্দ "কাশ্মীরা" থেকে কাশ্মীর শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বলে ধরনা করা হয় । এক সময় কাশ্মীর শব্দটির মাধ্যমে শুধু দুইটি পর্বতমালার উপত্যকাকে নির্দেশনা করা হতো । এই সময় টা ছিল উনবিংশ সালের মাঝামাঝিতে । কালের বিবর্তনে আজ বিশাল আয়তনের একটা অঞ্চল বুঝায় কাশ্মীর শব্দটির মাধ্যমে । যার রূপে ও সৌন্দর্যে বিমোহিত হয় সবাই । কাশ্মীর অঞ্চলটি তিনটি দেশ দ্বারা শাসিত  । ভারত, পাকিস্থান ও চিন । ভারত শাসিত অঞ্চল হলো জম্মু কাশ্মীর ও লাদাখ । পাকিস্থান কর্তিক শাসিত অঞ্চল হলো গিলগিত-বালতিস্থান ও আজাদ কাশ্মীর প্রদেশ । আকসাই চীন ও ট্রান্স-কারাকোরাম ট্রাক্ট অঞ্চল সমূহ হলো চীন দ্বারা শাসিত । 


কাশ্মীরের সৌন্দর্য 


কাশ্মীরের সৌন্দর্য



কাশ্মীর এতটাই সৌন্দর্য যে একে পৃথীবির স্বর্গ বলা হয় । কাশ্মীর এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে বিমুখিত হয়ে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর একে স্বার্গের সাথে তুলনা করেছেন । চাকদিকে চোখে পড়ে শুধু উচু উচু সাদা পাহাড়ের মিলন মেলা । যে গুলো পোড়াই বরফ দ্বারা বেষ্টিত । সবুজ উপত্যকা ,মোঘল সম্রাটদের উদ্যান , বরফের চাদরের মোড়ানো পাহাড়ের পেছনে সুনীল আকাশ , ঝরনার কল কল ধ্বনি , বাস্তার দুই ধারে আপেল গাছের বাগান , বরফে বেষ্টিত জাফরান বাগান সবগুলো একত্রে মিলিয়ে কাশ্মীর যেন সারা বিশ্বের রূপ একাই নিয়ে রেখেছে । শীতকালে কাশ্মীরকে সাদা এক টুকরা মেঘের মতো দেখায় । কেননা এই সময় বিসৃত অঞ্চল জুড়েই তুষার পড়ে । আর গ্রীষ্মকালে তুষার গলে যায় , গাছ গুলো আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠে ,তৃনভূমিতে ফুল ফুটে  মনে হয় কোন শিল্পীর শৈলপিক মনের ছোঁয়ায় অঙ্কিত এক নগরী ।এখানের আপেল বাগান থেকে আপেল নিজ হাতে পেড়ে খওয়ার  মাঝে আছে এক অকল্পনীয়  ভালো লাগার অনুভূতি । আপেল ছাড়াও রয়েছে এখানে আরো অনেক রকেমের ফলের সমারোহ । যা আপনার মনকে দিবে আলাদা প্রশান্তি । সত্যিই যেন কাশ্মীর একটি স্বর্গ রাজ্য । আপনার চোখ ও মনের শান্তির আরেক নাম হলো কাশ্মীর ভ্রমন । এই স্বর্গ রাজ্য কাশ্মীরের আরো অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে । সে গুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো ।



কাশ্মীরের সৌন্দর্য বেষ্টিত এলাকা সমূহ 


শ্রীনগর 





কাশ্মীরের  সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করতে গেলেই প্রথমই আসবে সৌন্দর্য মন্ডিত এলাকা শ্রীনগর  এর কথা । যে খানে প্রথম দর্শনেই চোখে পড়বে তুষারে ঢাকা বড় বড় পাহাড় । যে গুলো সম্পন্ন রূপে তুষার দ্বারা বেষ্টিত । শ্রীনগরের দর্শনীয় স্থানগুলো -


  • মোঘল গার্ডেন 
  • ডাল লেক 
  • নাগিন লেক 
  • হযরত বাল মসজিদ 
  • আরডাল লেক এর ভাসমান শহর 

গুলমার্ক 





গুলমার্ক শ্রীনগর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এখানে  দেখা মিলে সবুজ ঘাসে বিসৃত ভূমির উপর শুভ্র তূষার  । গুলমার্কে তূষার পরে সারা বছরই । এখানে প্যারাগ্লাডিং ও ক্যাবল কারে চড়তে পারবেন । গুলমার্কের দর্শনীয় স্থানগুলো -


  • গন্ডোলা 
  • গলফ কোর্স
  • আফারওয়াত পিক 
  • সেন্ট ম্যারি চার্চ

পেহেলগাম 





শ্রীনগর থেকে ১০০ কিলোমিটার রেঞ্জ এর মধ্যেই পেহেলগাম অবস্থিত । সহজ কথায় বলতে গেলে শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম এর দূরত্ব হবে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটারের মতো । শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম যাওয়ার সময় এর চারদিকের রাস্তা আপনাকে বিমুখিত করবে । চিনার ও পাইন গাছ , বরফের বেষ্টিত জাফরান খেত , নানা রকম ফসল ফলাদির জমি আপনাকে ফিল দিবে অসাধারণ অনুভূতির ।  পেহেলগামের রাস্তার দুই ধারে রয়েছে আপেল বাগান । জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের ভিতরে গেলে আপেল বাগান থেকে আপেল নিজ হাতে সংগ্রহ করে খাইতে পারবেন । পেহেলগামে আপনার চোখ ও মনকে শান্তি দেওয়ার জন্য অনেক জায়গা  রয়েছে । পেহেলগামের দর্শনীয় স্থান সমূহ - 


  • লিদার নদী 
  • বেতাব ভ্যালি 
  • চান্দেরওয়ারি 
  • আরু ভ্যালি 
  • কাশ্মীর ভ্যালি পয়েন্ট 
  • কানিমার্গ 
  • ধারিয়ান 
  • পেহেলগাম ভিউ পয়েন্ট 
  • মিনি সুইজারল্যান্ড ও সুটিং স্পট 



সোনামার্গ





সোনামার্গ শ্রীনগর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত । এখানে দেখা মিলে তূষারময় সাদা সাদা পাহাড়ের । সোনামার্গে বৃষ্টিপাত এবং তুষারপাত  বেশি হয় ।  এখানে প্রায় ৯৩২ মিলিমিটার পরিমান বৃষ্টপাত হয়ে থাকে এক বছরে । স্লেজিং, টাটটু ঘোড়া ও স্নো বাইকে চড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে । সোনামার্গে আপনি দেখতে পাবেন -


  • থাজিয়ান হিমবাহ
  • সিন্ধু নদী 

কাশ্মীর কিসের জন্য বিখ্যাত ? 


কাশ্মীর কিসের জন্য বিখ্যাত তা বলতে গেলে সহজ কথায় বলতে হয় , কাশ্মীর তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারনে বিখ্যাত । কাশ্মীর এর সৌন্দর্যের কাছে অন্য সব সৌন্দর্য ফেকাসে মনে হবে । এখানে অনেক ফল ফলাদি জন্মায় । আমাদের দেশে আপেল এর চাহিদা অনেকটা্‌ই মিটায় কাশ্মীরি আপেল । তাছাড়াও কাশ্মীরি শাল কাশ্মীরকে করছে বিখ্যাত । এখানকার বাসিন্দারা নিজ হাতে এই শাল তৈরি করে থাকে । কাশ্মীরি শাল গুলো এক নজরে দেখলেই যে কেউ বলে দিতে পারবে তারা যে কতটা দক্ষতার সাথে ও যত্নে কাশ্মীরি শাল  তৈরি করে । আর এই শাল গুলো প্রচন্ড ঠান্ডায়ও আপনকে ক্ষণিকেই গরম করে তুলবে ।  কার্যক্ষমতা কারনে পুরো বিশ্বসে এত বিখ্যাত কাশ্মীরি শাল ।

 


কাশ্মীর কখন গেলে ভালো হয় ?


কাশ্মীর ভ্রমণের কথা মাথায় আসলে সর্বপ্রথমে মাথায় আসে কখন কাশ্মীর ভ্রমন করতে গেলে ভালো হয় বা কাশ্মীর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কোনটা ? ভূ-স্বর্গ খেত কাশ্মীর ভ্রমনে যে কোন সময়ই গেলেই ভালো লাগবে । তবে কাশ্মীরের সৌন্দর্য সিজনের পরিবর্তনে পরিবর্তিত । একেক সিজনে কাশ্মীর একেকে রূপে সাজে । তাই কাশ্মীর ভ্রমণ যেতে চাইলে আপনার মন কশ্মীরের সৌন্দর্যের কোন রূপটা দেখতে চাই ,সে আপনার ইচ্ছার উপর ।আসুন কাশ্মীরের সৌন্দর্য কোন সময় কেমন হয় তা জানি ?


গ্রীষ্মকাল ইংরেজি হিসাবে এপ্রিল থেকে মে এই সময় ্‌আপনি কাশ্মীর ভ্রমনে যেতে পারেন । এই সময় কাশ্মীর সবুজে ভরপুর থাকে । তৃনভূমিতে ফুটে নানা রকমের ফুল । বিশেষ করে চারকিকে টিউলিপ ফুল ফুটে । তবে যারা বরফ দেখতে পছন্দ করেন তারা এই সময় গেলে বেশি বরফ বা স্নোফল দেখতে পাবেন না । কেননা এই সময় বরফ গলতে শুরু করে । 


শরৎকাল সেই হিসাবে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর সময়টাতে ঘুরে আসতে পারেন । এই সময় দেখা মিলবে বিভিন্ন ফলমূলের । বিশেষ করে এই সময়ে আপেল বাগানে আপেল পাওয়া যায় । চীনা বাদামের ও দেখা মিলবে । এই সময়ও বরফের তেমনটা একটা দেখা পাওয়া যাবে না ।


শীতকাল অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কাশ্মীর ভ্রমনের উপযুক্ত সময় হিসাবে অনেকে মনে করেন । কেননা কাশ্মীর তখন পুরো বরফে বেষ্টিত থাকে । চারদিকে বরফ আর বরফ , স্নোফল তো আছেই । তবে শীতকালে কাশ্মীর ভ্রমনের ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বাড়তি সবধানতা অবলম্বন করতে হবে । 


কেমন খরচ পড়বে কাশ্মীর ভ্রমনে গেলে ?


কাশ্মীর ভ্রমনে গেলে ৬-৮ জনের একটি দল হলে খরচ অনেক কমে যায় । ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ভাড়া পড়রে জনপ্রতি ১৫০০- ২৫০০ টাকা পর্যন্ত বাসে করে । আর বিমানে করে গেলে ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৬-১০ হাজার টাকা করে । কলকাতা থেকে আপনি ইচ্ছে করলে ট্রনে চড়ে কিংবা বিমানে চড়েও  কাশ্মীর পৌছাতে পারবেন । এক্ষেত্রে ট্রেনে নন এসি স্লিপার কোচের ভাড়া পড়বে ২২০০-২৫০০ টাকা ,আর এসি কোচে গেলে ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকা পর্যন্ত । বিমানে করে কলকাতা থেকে জাম্বু কাশ্মীর ভ্রমণে খরচ পড়বে ১২-২০ হাজার টাকার ভিতেরে । 


তবে যারা খরচ কিছুটা বাচিয়ে যেতে চান তারা চাইলে সীমান্ত পেরিয়ে লোকাল বাসে করে কলকাতা ,আবার কলকাতা থেকে বাসে করে জাম্বু ,শ্রীনগর কাশ্মীর যেতে ও পারেন । মোট কথা ৫ থেকে ৬ দিনের জন্য কাশ্মীর ভ্রমণে গেলে একটু খরচ বাচিয়ে চললে জনপ্রতি ৫০০০০ হাজার টাকার ভিতরে কাশ্মীর ভ্রমণ সম্পন্ন করে আসতে পাড়বেন । 


আপনাদের কিছু প্রশ্ন ? FAQs


কাম্মীরে গিয়ে কোথায় থাকবো ?


কাশ্মীরে গিয়ে আপনি বেশ কিছু হোটেল পেয়ে যাবেন । হোটেল গুলোতে ভাড়া পড়বে প্রতি রাতে ১০০০-২০০০ রুপি । তাছাড়াও শ্রীনগর কিংবা জাম্বুতে থাকতে পারবেন । এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটা হোটেল ,রির্সোট এবং হাউজিং বোর্ড । যে গুলো প্রতিরাত থাকার জন্য আপনাকে গনতে হবে ২৫০০-৩৫০০ রুপি করে । 


কাশ্মীরে গিয়ে কি কি খাব ? 


কাশ্মীর গিয়ে ফলমূল তো খাবেনই কেননা এখানে তাজা ফলের স্বাদ নিতে পারবেন । তাছাড়াও যে খাবার গুলো খেতে ভুল করবেন না সে গুলো হলো - 

  • কাশ্মীরি কাবাব 
  • মাটন রোগান জোশ 
  • ভেড়ার মাংস 
  • পনির চামান 
  • আলুর দাম 
  • কাশ্মীরি চা 
  • কাশ্মীরি ওজওয়ান (নানা ধরনের খাবারের এক প্লেটার ) 

কাশ্মীর ভ্রমনে গেলে কি কি টিপস গ্রহন করতে হবে ?


বিমানে টিকেট ১ বা ২ মাস আগে কেটে রাখা ভালো কেননা খরচ একটু কম পড়বে । কাশ্মীর ভ্রমনে গেলে সবসময় শীতের প্রস্ততি ভালো করে নিয়ে যেতে হবে । কেননা এখানে সবসময় ঠান্ডা থাকে । যাদের শ্বাস কষ্ট আছে তারা কাশ্মীর ভ্রমনে গেলে অবশ্যই ইনখেলার সাথে নিয়ে যাবেন । তাড়াও মাথা ব্যাথার ট্যাবলেট সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন । কাশ্মীর ভ্রমনে গলে আপনাকে কিছুটা সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে । এতে করে আপনি কাশ্মীর ভ্রমণ করতে স্বাছন্দ্য বোধ করবেন । কাশ্মীর ভ্রমনে অনেক দালান প্রকৃতির লোক আছে যারা আপনাকে এক্সট্রা মজা দেবার নাম করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিবে । গাড়িতে উঠতে বা কোন হোটেল নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে দাম দর করে উঠবেন । কাশ্মীরে সাধারণত রাত ৮ টার পর কোন দোকান খোলা থাকে না । তাই  জিনিস পত্র কেনার ক্ষেত্রে সময়টার কথা মাথায় রাখবেন । কাশ্মীরি খাবার বোঝে শোনে খাবেন । কেননা কাশ্মীরি খাবারে মসলার পরিমাণ থাকে অতিরিক্ত । কাশ্মীর ভ্রমনে যাওয়ার আগেই অবশ্যই সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখায় ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স হিসাবে জামা দিতে হবে । 


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.