বাচ্য কাকে বলে ?বাচ্যের শ্রেণীবিন্যাস ?

 বাচ্য কাকে বলে ? 


বাচ্য কাকে বলে 



বাচ্য :- মানুষ মনের ভাব সম্পন্ন রূপে প্রকাশ করার জন্য বাক্য ব্যবহার করে । আর এই মনের ভাব প্রকাশকে আরো  সুন্দর এবং প্রাণবন্ত করার জন্য  বাক্যে বিভিন্ন প্রকাশভঙ্গি বা বচনভঙ্গির ব্যবহার করতে হয় । আর এই বিশিষ্টভঙ্গিকেই বাচ্য বলা হয় । বাক্যে ক্রিয়াপদের রূপের  পরিবর্তন ঘটে  বাক্যে ব্যবহৃত বচনভঙ্গি অনুসারে । একটি বাক্যে কর্তা ,কর্ম,ক্রিয়া  থাকে । বাক্যে ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে  কর্তার সাথে , না কর্মের সাথে অথবা কর্ত বা কর্ম কারো সাথেই ক্রিয়ার সম্পন্ন না হয়ে , শুধু মাত্র প্রকাশ করছে ক্রিয়ার কাজ । বক্যে  এইরকম ক্রিয়ার বিভিন্ন রূপ অনুযায়ী পরিবর্তনকেই  বাচ্য বলা হয় । 



এই ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা দরকার , বক্তব্যঅনুসারে  একই বাক্যের  রূপগত পরিবর্তন হয় ঠিকই ,কিন্তু অর্থের কোন পরিবর্তন হয় না এবং শুধু মাত্র বাক্যের গঠন গত কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে । নিচে কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টা আরো পষ্ট করে বুঝি । 



উদাহরণ 


১.  আমি ভাত খেয়েছি ।

  -আমার কতৃক ভাত খাওয়া হয়েছে ।

২. জনাবের থাকা হয় কোথায় ?

    জনার কোথায় থাকেন ?

৩. জেলে মাছ ধরেছে ।

    জেলে কতৃক মাছ ধরা পড়ছে । 



এখন জানবো ,বাক্যের প্রকারভেদ অর্থাৎ বাক্য কত প্রাকার ও কি কি ?


বাচ্যকে সাধারণত ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যেমন :-


১.  কর্তৃবাচ্য

২. কর্মবাচ্য 

৩. ভাববাচ্য 



কর্তৃবাচ্য কাকে বলে এবং কর্তৃবাচ্য চেনার উপায়  ? 


কর্তৃবাচ্য :- যে বাক্যে  কর্তার সঙ্গে ক্রিয়াপদটি সরাসরি  যুক্ত থাকে,কর্তা প্রাধান্য পায় ,কর্তা ক্রিয়ার কাজ সম্পন্ন করে এবং ক্রিয়া কর্তারই অনুগামী হয় তাকেই কর্তৃবাচ্য বলে ।  আরো সহজ ভাবে বলা যায় ,যে বাক্যে কর্তা প্রাধান্য পয় এবং কর্তা অনুগামী ক্রিয়া পদ হয় তাকেই কর্তৃবাচ্য বলে । যেমন :-  অরিত গান গায় ।  বাক্যটিতে অরিত কর্তা ,এখানে অরিত  কর্তা হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছে  এবং অরিত অনুগামী বাক্যের ক্রিয়া পদ গায় হয়েছে ।


কর্তৃবাচ্য চেনার উপায় 


👉 কর্তৃবাচ্যে কর্তা প্রধান থাকে অর্থাৎ কর্তা প্রধান্য পায় ।

👉 কর্তৃবাচ্যে কর্তা সবসময় শূন্য বিভক্তির হয় । মাঝে মাঝে "এ", "তে" , "য়" বিভক্তি যুক্ত হতে পারে কর্তার সাথে ।

👉 কর্তৃবাচ্যে কর্তা অনুসারে ক্রিয়া পদ গঠিত হয় । 


আরোকিছু কর্তৃবাচ্যের উদাহরন 


⇨ কাকন ভাত খায় ।

⇒ পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে ।

⇒ করিম মাছ ধরতে যানে । 

⇒ রহিম বৃষ্টি আসার ভয়ে ঘরে আশ্রয় নিয়েছে ।



কর্মবাচ্য কাকে বলে এবং কর্ম বাচ্য চেনার উপায় ?


কর্মবাচ্য :- আমরা জেনেছি যে, বাচ্য  হচ্ছে  বিভিন্ন্ বাক্যের প্রাকশভঙ্গি । আর কর্মকে কেন্দ্র করে যে বাচ্য তৈরি হয় সেটাই হলো কর্মবাচ্য । কর্মবাচ্যে কর্মই প্রধান্য পায় অর্থাৎ কর্মবাচ্য হলো বাক্যের এমন এক প্রকাশভঙ্গি যেখানে কর্মই মূখ্য রূপে প্রতিফলিত হয় । যেমন - আলেকজেন্ডার কর্তৃক পারস্য দেশ বিজিত হয়েছে । বক্যে পারস্য দেশ কর্মহিসাবে প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়েছে তাই বাক্যটি কর্মবাচ্য ।


কর্মবাচ্য চেনার উপায় 


👉 কর্মবাচ্যে কর্তার সাথে তৃতীয়া বিভক্তি  'দ্বারা' , 'দিয়া' ,'কর্তৃক' যুক্ত হয়ে কর্ম বাচ্য তৈরি হয় । যেমন :- রবিন্দ্রনাথ কতৃক গীতাঞ্জলি রচিত হয় । এখানে রবিন্দ্রনাথ হলো কর্তা কতৃক হলো  তৃতীয়া বিভক্তি । কর্তার সাথে তৃতীয়া বিভক্তি  যুক্ত হয়েছে বলে এটি কর্ম বাচ্য ।


 👉 কর্মবাচ্যে  কর্মের সাথে প্রথমা বিবক্তিও যুক্ত হতে পারে  ।  উদাহরণটি খেয়াল করলে বিষয়টা বুঝতে সহজ হবে । যেমন : চোরটা ধরা পড়েছে । এখানে উৎস হিসাবে আমরা যদি ধরি মানুষ দ্বারা চোরটা ধরা পরেছে ।  বাক্যটিতে চোরটা প্রথমা বিভক্ত সাথে চোরটা কর্মপদ যা বাক্যে  প্রধান হিসাবে প্রতীয়মান হয়েছে, আর ধরা পড়েছে হলো ক্রিয়া পদ যা কর্ম পদকে অনুসরণ করেছে । তাই এটি কর্মবাচ্য ।


👉কর্মবাচ্যে প্রথমা বিভক্তি ছাড়াও দ্বিতীয়া বিভক্তির ব্যবহার হতে পারে । যেমন - আসামিকে জরিমানা করা হয়েছে । এখানে আসামি হলো কর্ম এর সাথে যুক্ত হয়েছে দ্বিতীয়া বিভক্তি এবং ক্রিয়া পদ গুলো কর্মকে অনুসরণ করেছে । এই বাক্যেও উৎস রয়েছে । আসামিকে কার দ্বারা জরিমানা করা হয়েছে  প্রশ্ন করলে উত্তরে আসবে আদালত দ্বারা । 


আরো কিছু কর্মবাচ্যের উদাহরণ দেখে নেই 


⇒ আমার দ্বারা কাজটি হয়েছে ।

⇒ অরিতের বইটি পড়া হয়ে গেছে ।


ভাববাচ্য কাকে বলে এবং ভাববাচ্য চেনার উপায় 


ভাববাচ্য :- যে বাচ্যে কর্ম থাকে না , এবং ক্রিয়ার অর্থই প্রধান রূপে প্রতিফলিত হয় তাকেই ভাববাচ্য বলে । যেমন - কখন খাবে । এই বাক্যে কর্ম নাই খাবে ক্রিয়াই প্রধান্য  পেয়েছে । 


ভাববাচ্য চেনার উপায়  


👉 ভাববাচ্য চেনার সহজ উপায় হচ্ছে  কর্তার পরিবর্তনে যদি ক্রিয়ার পরিবর্তন না হয় তাহলে এটি ভাববাচ্য হবে । যেমন -আমার খাওয়া হলো না । এখানে আমার হলো কর্তাপদ ,এখানে কর্তাপদ যতই পরিবর্তন হক না কেন ,তোমার খাওয়া হলো না , তার খাওয়া হলো না , অর্থাৎ কর্তা যতই পরিবর্তন হোক না কেন ক্রিয়ার কোন পরিবর্তন হয় নাই । তাই এটি ভাববাচ্য । 


👉 ভাববাচ্যে অনেক সময় কর্তা উজ্জ থাকে । যেমন : এবার ট্রেনে উঠা যাক ।  এখানে কর্তা উজ্জ মানে এবার ট্রেনে উঠা যাক প্রশ্ন করলে কাদের উঠা যাক উত্তর আসবে  আমাদের,তোমাদের,তাদের ইত্যাদি । এখানে "আমাদের,তোমাদের বা তাদের  কর্তাটি উজ্জ । এখন মূল্য বাক্যে আমরা যত ভাবেই বলি না কেন উজ্জ কৃত কর্তা লাগিয়ে আমাদের ,তোমাদের , তাদের  অর্থাৎ কর্তার পরিবর্তন হলেও ক্রিয়ার কোন পরিবর্তন হয় নাই । তাই এটি ভাববাচ্য । 



আপনাদের বলা কিছু প্রশ্ন । FAQ


প্রশ্ন-  "বাচ্যার্থ" শব্দের কোন ধরনের অর্থ প্রকাশ করে ? 

উত্তর - বাচ্যার্থ শব্দ "মূখ্য" অর্থ প্রকাশ করে । 


প্রশ্ন - বাচ্য শব্দের অর্থ কি ? 

উত্তর - বাচ্য শব্দের অর্থ 'বক্তব্য বলার যোগ্য কোন কথা ' ।


প্রশ্ন - "চাদ দেখা যাচ্ছে " কোন বাচ্য ? 

উত্তর - চাদ দেখা যাচ্ছে না ভাববাচ্য  ।


প্রশ্ন - বাচ্য কাকে বলে ? 

উত্তর - বাক্যে যে প্রকাশভঙ্গি বা বচনভঙ্গি ব্যবহার করা হয় তাকেই বাচ্য বলে  । 



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.