ই পাসপোর্ট সম্পর্কে জানা অজনা তথ্য এবং ২০২৪ সালে কি ভাবে ই পাসপোর্ট আবেদন করবেন

 ই পাসপোর্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা 


ই পাসপোর্ট



ই পাসপোর্ট 


যারা পাসপোর্ট  করবেন বা করেছেন তারা সবাই ই পাসপোর্ট  সাথে পরিচিত আছেন । ই পাসর্পোট নামটা সবাই জানে  কিন্তু অনেকেই জানেনা ই -পাসপোর্ট কি ? সহজ কথায় বলতে গেলে ই পাসপোর্ট হলো ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট । যার মধ্যে এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ রয়েছে । আর এই চিপ এর মধ্যে থাকে পাসপোর্ট ধারীর বায়োমেট্রিক  তথ্য সমূহ । এতে মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ছাড়াও ব্যবহৃত হয়েছে অ্যান্টেনাযুক্ত স্মার্ট কার্ড প্রযুক্তি । যার মধ্যে  থাকে তথ্য ,যা পাসপোর্ট ধারী ব্যাক্তির পরিচয়ের প্রামাণ সরূপ ব্যবহার করা হয় । বিশেষ করে এতে থাকে  চোখের আইরিশ , ১০ আঙ্গুলের চাপ এবং পাসপোর্ট ধারী ব্যাক্তির ৩ রকমের ছবি । যার ফলে অন্য দেশগুলোর কতৃপক্ষ সহজে পাসপোর্ট ধরীর ব্যাক্তির পরিচয় সনাক্ত করতে পারে । ভ্রমণের সময় ই -গেইট ব্যাবহার করে লম্বা লাইনে না ধারিয়ে সহজে ভিসা চেকিং করানো যায় । তাই দ্রুত ইমেগ্রেশন সম্পন্ন হয়ে যায় । 



ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ? 


ই পাসপোর্ট করার আগে জানতে হবে ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে । কেননা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসেই ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন  করা যায় । ৫ বছর বা ‌১০ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন ।  আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আপনাকে যে সমস্থ কাগজ পত্রাদি সাথে নিয়ে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে জমাদিতে হবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হবে এখন । আসুন জানি ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে 


প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ই  পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ?


১. আবেদনকারীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID কার্ডের ফটোকপি লাগবে । তবে ডকুমেন্টস জমাদেওয়ার সময় সাথে অরজিনাল স্মার্ট কার্ডটি নিয়ে গেলে ভালো হয় । কেননা প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে । 


২.  আবেদনকারীর বসবাসরত এলাকার ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যানের দেওয়া নাগরিক সনদপত্র লাগবে । 


৩.  যে কোন মাসের পরিশোধিত  ১ কপি বিদ্যুৎ বিলের কাগজ । 


৪.  অনলাইনে যখন ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করা হয় , আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর  ৩ পৃষ্ঠার  অনলাইন আবেদন পত্র প্রধান করা হয় । উক্ত আবেদনের পত্রের কপি লাগবে । 


৫.  অনলাইন আবেদন সারাংশ ।


৬.  নিকস্থ কোন সরকারি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে নিদিষ্ট ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট করে উক্ত চালানের কপি লাগবে ।


৭.  আবেদনকারী শিক্ষার্থী হলে  শিক্ষারত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত স্টূডেন্ট আইডি কার্ডের কপি কিংবা সার্টিফিকেটের কপি লাগবে । 


৮. পিতা মাতার NID কার্ডের কপি লাগবে । তবে এটা অপশোনাল জমা দিলে ভালো । 


৯.  যারা বিবাহিত তাদের বৈবাহিক সনদপত্র লাগবে । 



শিশুদের জন্য ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ?


১. অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ ।


২. আবেদকারী শিশুর পিতা মাতার NID কার্ডের ফটোকপি । শিশুদের ক্ষেত্রে পিতা মাতার আইডি কার্ডের ফটোকপি বাধ্যতামূলক প্রদান করতে হবে । 


৩. অনলাইন আবেদন সারাংশ ।


৪. আবেদন কপি ।


৫. নিদিষ্ট ফি ব্যাংকে প্রদানের চালান কপি ।


৬. শিশুর টীকা কার্ডও লাগতে পারে তবে এটা প্রয়োজন অনুসারে ।


৭. আবেদনকারী শিশুর 3R সাইজের ছবি । 



সরকারি চাকরিজীবীদের ই পাসপোর্ট  করতে কি কি লাগবে  ? 


সরকারি চাকরিজীবিরাওতো প্রাপ্তবসষ্ক । তাই প্রাপ্তবয়ষ্কদের পাসপোর্ট করতে যা যা লাগবে তার প্রায়ই সবই সরকারী চাকরিজীবিদের ক্ষেত্রেও লাগবে । তবে তাদের ক্ষেত্রে আরো দুইটি ডকুমেন্টের প্রয়োজন বাধ্যতামূলক । তারা যেহেতু সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত আছেন তাই তাদের NOC এবং GO নামের দুটি ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে । যে সকল সরকারি চাকরিজীবি  বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট আবেদন করবে তাদের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কিংবা অভিদপ্তর থেকে  NOC মানে No Objection Certificate সনদগ্রহন করতে হবে । আর তারা যদি সরকারি কাজে দেশের বাহিরে যান তাহলে তাদেকে GO মানে Government Order  সনদপত্রের প্রয়োজন পরবে । 



ই পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৪


ই পাসপোর্ট  করার জন্য আপনাকে  প্রথমে  ই পাসপোর্টের যে অফিসিয়াল ওয়েভ সাইট  আছে সে ওয়েভসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে । আর এই আবেদনটা করার সময় ৯০% লোকই ভুল করে । কি কি ভুল করে সে বিষয় গুলোই এখন আমরা জানবো ?


ভুল ১.  ই পাসপোর্টে আবেদন করার জন্য আপনাকে প্রথমেই চলে যেতে হবে ই পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েভসাইটে (www.epassport.gov.bd ) এখানে । এই ওয়েভসাইটে যাওয়ার পর আপনাকে রেজিট্রেশন করতে হবে । রেজিট্রেশন অপশনে গিয়ে আপনাকে Given Name and Surename প্রধান করতে হবে । সেক্ষেত্রে Given Name  এ দিবেন নামের প্রথম অংশ এবং Surename এ দিবেন নামের শেষের অংশ । মনে করেন ,আমার নাম MD Jahidul Islam Orit এখানে Given name এ হবে MD Jahidul Islam আর Surename এ হবে Orit .যদি আপনার নামটা ১টি অক্ষরে হয় যেমন ধরেন Jahidul তাহলে নামটি আপনে দিবেন Surename এ । Surename টা হলো মেনডেটরি । এটা আপনাকে অবশ্যই দিতে হবে । এভাবে আপনি Given name এবং Surename প্রধান করবেন । 


ভুল ২. আবার অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে MD পরে ডট (.) দিবো কি না ? উত্তর হচ্ছে না । MD এর পর কোন ডট দিবেন না ।  এমডির বা নামের কোন অংশের সাথেই ডট বা কমা ব্যবহার করা যাবে না । আর এটি অফিসিয়াল ওয়েভসাইটে ভালো করে বলা আছে ।  আপনার ভোটার আইডি কার্ডেও যদি এমডি পরে ডট থাকে তাহলেও ই পাসপোর্ট আবেদন করার সময় ডট ব্যবহার করবেন না । 


ভুল ৩. পিতা - মাতার নাম আপনার ভোটার আইডি কার্ডে উল্লেখ করা নাম অনুযায়ী দিবেন নাকি পিতা-মাতার আইডি কার্ডে উল্লেখ করা নামই দিবেন ? এখানে ভুলটা করে ফেলে অনেকেই । সহজ কথায় উত্তর হচ্ছে আপনার এনআইডিতে আপনার পিতা-মাতার নাম যে ভাবে উল্লেখ আছে সেই ভাবেই প্রধান করবেন । 


ভুল ৪. ই পাসপোর্ট আবেদন করার সময় আরেকটি উল্লেখযোগ্য ভুল সবাই করে । সেটা হলো পাসপোর্ট আবেদন কারীর Profession সিলেক্ট এর সময় । ভালো করে খেয়াল করুন , পাসপোর্ট করার সময় আপনি যে প্রফেশন দিবেন উক্ত প্রফেশনের আপডেড ডকুমেন্ট আপনাকে প্রধান করতে হবে । এখন জানবো  প্রফেশনে অনুযায়ী আপনাকে কোন  ডকুমেন্ট প্রধান করতে হবে । 


⇨ স্টূডেন্ট হলে আপনাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আপডেট স্টূডেন্ট আইডি প্রধান করতে হবে । তবে এই ক্ষেত্রে সার্টফিকেটও ডকুমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে সার্টফিকেট ডকুমেন্ট আকারে ব্যবহার না করাই ভালো । 


⇨ সকরারি চাকরি প্রফেশন হলে আপানকে NOC বা GO ডকুমেন্ট প্রধান করতে হবে । 


⇨ প্রফেশনে ব্যবসায়ী হলে আপনাকে ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স ডকুমেন্ট হিসাবে প্রধান করতে হবে । 


⇨ আপনি  যদি কোন কিছু না করেন  তাহলে আপনকে প্রফেশন প্রাইভেট সার্ভিস সিলেক্ট করতে হবে । এক্ষে্ত্রে কোম রকম ডকুমেন্ট প্রধান করতে হবে না ।


ভুল ৫. বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা । আপনার বর্তমান ঠিকানা আর স্থায়ী ঠিকানা এক হয় তাহলে পুলিশভেরিফিকেশন এক জায়গা থেকে হবে । আর বর্তমান ঠিকানা আর স্থায়ী ঠিকানা যদি ভিন্ন হয়ে তাহলে পুলিশ ভেরিফিকেশন দুই জায়গা থেকে হবে । এখানে উল্লেখযোগ্য ভুল হয় City/ village / house এই অপশনে । খেয়াল রাখা জরুরি City/village/ House এর জায়গায় আপানকে দিতে হবে আপনার গ্রামের নাম । আরকটা অপশন আসবে Road/ block / Sector এখানে দিবেন ,আপনি যদি গ্রামের হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে ওয়ার্ড নাম্বার দিবেন । আর আপনি যদি শহরের হয়ে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে রোড নাম্বারটা দিতে হবে । 


ভুল ৬. যাবতীয় কার্যসম্পন্ন করে  আবেদনটি পূনরায় চেক না করে সাবমিট দিলে ভুল হতে পারে । তাই সাবমিট করার আগেই অবশ্যই সব তথ্যগুলো বার বার চেক করে দেখবেন সব ঠিক আছে কি না । যদি ঠিক থাকে তাহলে সাবমিট করে দিবেন । 



ই পাসপোর্ট আবেদন 


প্রথমে  মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে যে কোন একটি ব্রাউজারে যেতে হবে । ব্রাউজার সিলেক্ট করার পর সার্চবারে এসে সার্চ করবেন  Epassport লিখে । সার্চ করার পর ই পাসপোর্টের একটি সাইট চলে আসবে । সাইটি আসার পর ক্লিক করে সাইটির  ভিতরে প্রবেশ করবেন । তারপর Apply Online for e-passport / Re-issue এই অপশনটি সিলেক্ট করবেন । সিলেক্ট করার সাথে সাথে একাউন্ট রেজিট্রেশন অপশনে নিয়ে যাবে । সেখানে বেশ কয়েকটি ইনফরমেশন চাইবে । সবগুলো তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করে একাউন্ট তৈরি করে  নিন । একাউন্ট তৈরি করার পর আবার সাইটের হোমপেইজে গিয়ে পূনরায় Apply Online for e-passport / Re -issue এই অপশনে ক্লিক করতে হবে । সেখান থেকে আপনাকে প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করতে হবে । প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করার পর বাম দিকে দেখতে পাবেন সাইন আপ নামক একটি অপশন । এখন সাইন আপে ক্লিক করুন । সাইন আপে ক্লিক করার পর আপনার মেইল ও পাসওয়ার্ড সাথে একটি ক্যাপচা পূরন করে সাইপ করলে দেখতে পাবেন ডানদিকে লিখা আছে Apply in a new Passport এখানে ক্লিক করুন । ক্লিক করার সাথে আপনাকে কয়েকটি স্টেপ দেখাবে । সেগুলো ঠান্ডা মাথায় সঠিকভাবে পুরন করুন । পুরনকরা শেষ হলে আবার ভালো করে খেয়াল করুন কোন প্রকার ভুল হয়েছে কি না ? যদি ভুল না হয় তাহলে নিদিষ্ট পরিমাণ ফি অনলাইনে প্রদান করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে দিন । তবে এখানে ফি অনলাইনে না দিয়ে অফলাইনেও  ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে পারবেন । সাবমিট করার সাথে সাথে আপনাকে ৩ পৃষ্ঠার আবেদন ফরম আপনার মেইলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মেইলে গিয়ে ৩ পৃষ্ঠার আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন । বাস হলে গেল আপনার ই পাসপোর্ট আবেদন । তারপর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুলো নিয়ে নিকস্থ পাসপোর্ট অফিসে জামা দিয়ে  বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে আসতে হবে । 


ই পাসপোর্ট ফি কত ? 


ই পাসপোর্ট দুইটি মেয়াদী করা যায় । একটা হলো ৫ বছরের মেয়াদী আরেকটা হলো ১০ বছরের মেয়াদী । ৫ বছরের মেয়াদী পাসপোর্ট ফি -৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে  ৪০২৫ টাকা আর  ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের ক্ষেত্রে  ৬৩২৫ টাকা । 

১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট ফি - ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের  নিয়মিত ফি হলো ৫৭৫০ টাকা , জরুরি ফি ৮০৫০ ,অতিব জরুরি ফি ১০৩৫০ টাকা । আর ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের নিয়মিত ফি ৮০৫০ টাকা ,জরুরি ফি ১০৩৫০ টাকা , অতিব জরুরি ফি ১৩৮০০ টাকা । 



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.