সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য
অবস্থান
বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে বিখ্যাত পর্যটন স্থল সাজেক ভ্যালি(Sajek Valley) অবস্থিত । Sajek Valley রাঙ্গামাটির উত্তরে অবস্থিত । রুইলুই ও কংলাক এই দুইটি পাড়া রয়েছে সাজেক ভ্যালিতে । রুইলুই পাড়া প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮০ সালে । এ পাড়াটি ১৭২০ফুট উচ্চতায় অবস্থিত । আর কংলাক পাড়া ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত । Sajek Valley রাঙ্গামাটির ছাদও বলা হয় । ৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে পৌছাতে হয় । আর দীঘিনালা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৯ কিলোমিটার । এর পূর্বে ভারতের মিজোরাম ,দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু ,উত্তরে ভারতের মিজোরাম এবং পশ্চিম এ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা অবস্থিত । সাজেক হচ্ছে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় ইউনিয়ন । এর আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেক বিজিবি দের একটি ক্যাম্প রয়েছে । সাজেক ভ্যালি মূলত লুসাই ,পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে । পুরো রাঙ্গামাটির অনেকটা অংশই Sajek Valley থেকে সসচোখে প্রত্যক্ষ করা যায় । তাই একে রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয় । সাজেক নদীর নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে সাজেক ভ্যালি ।
খাগড়াছড়ি থেকে Sajek valley যাওয়ার উপায়
সাজেক যদিও রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত ,কিন্ত সাজেক ভ্যালি যাওয়ার সহজ উপায় হলো খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া । যে কোন স্থান থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়া অত্যন্ত সহজ । খাগড়াছড়ি থেকে Sajek Valley পর্যন্ত যাইতে হলে কিছু নিয়ম-কানুণ মেনে যাইতে হয় । আসুন সেগুলো সর্ম্পকে জানি , খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেকে যাইতে হয় । পথই মধ্যে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প থেকে সাজেক যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে । তারপর আর্মি এসকর্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে । দীঘিনালা থেকে সেনাবাহীনির এসকর্ট শুরু হয় সকাল ১০ টায় আবার আরেকটি শুরু হয় বিকাল ৩ টায় । একই ভাবেই সাজেক থেকেও সকাল ১০ টায় ও বিকাল ৩ টায় আর্মির এসর্কট শুরু হয় । আর্মি এসকর্ট সাথে করেই সাজেক যাইতে হবে । সকালের এসর্কট মিস করলে বিকালের এসর্কট যাওয়া যাবে । কিন্তু বিকালের এসর্কট মিস করলে পরের দিনের অপেক্ষা ছাড়া কোন উপায় নাই । তাই এসর্কট সময় গুরুত্বদিয়েই দীঘিনালায় যাথাসময় উপস্থিত থাকতে হবে । কারো যদি নিজস্ব গাড়ি থাকে তার ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য । তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে খাগড়াছড়ির পর কোন ফিলিং ষ্টেশন নেই । তাছাড়াও খাগড়াছড়ি শহর থেকে মাহিন্দ্রা বা চান্দের গাড়ি বিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারেন । যদি লোক সংখ্যায় কম হন তাহলে সিনজি করেও ঘুরে আসতে পরেন । যদিও সিএনজি নিয়ে যাওয়াটা খুবই ঝুকিপূর্ন । চালক অভিজ্ঞ না হলে উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাছাড়াও খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা গিয়ে সাজেক যেতে পারবেন । দীঘিনালা থেকে মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়ে Sajek Valley ঘুরে আসতে পরেন ।
সাজেক ভ্যালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য
সাজেক অপরুপ রূপের নীলাভূমি । সাজেকে সর্বত্র মেঘ ,সবুজ আর পাহাড় । এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায় । সাদা মেঘের ভ্যালি ও চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি আপনাকে মুগ্ধ করবে । এখানে আপনি ২৪ ঘন্টায় প্রকৃতির ৩ টি রূপ দেখতে পাবেন । কখনো অনেক রোদ ,হঠাৎ করে মেঘ এসে ডেকে দেবে আপনার চারপাশ , ক্ষণিক পরেই বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেবে আপনাকে । সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাবেন আপনার হাতের কাছে সাদা সাদা মেঘ ।আপানর এমন মনে হবে যেন ,ইচ্ছে হলেই আপনি মেঘগুলোকে স্পর্শ করতে পারবেন । কংলাক পাহাড় হচ্ছে সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ । আর সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রাম হচ্ছে কংলাক পাড়া । কংলাক পাড়া থেকে কর্নফুলী নদী উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায় । আর কংলাক পাড়া হচ্ছে সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া । সাজেকের রুইলুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া যায় । কংলাকে যাওয়ার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড় ,আদিবাসীদির জীবনযাপন ,চারদিকে মেঘের আনাগোনা দেখা যায় । দিন কিংবা রাতেই সাবসময় সাজেক কে মনে হবে যেন দক্ষ শিল্পির আকা কোন ছবি । সাজেকে রয়েছে একটি হ্যালিপ্যাড । এটার উপর দাঁডায়ে আপনি খুব ভোরে মেঘের খেলা ও সূর্যদয়ে আলোর মেলা দেখতে পারবেন । সাজেকে সন্ধ্যার পর আকাশে দেখতে পাবেন কোটি কোটি তারার মেলা যা আপনার প্রাণ জুড়িয়ে নিবে নিমেষেই । তাছাড়াও চাঁদের আলো পড়তেই অপরুপ এক সোন্দর্য্য দেখতে পাবেন সাজেকের । এমন সময় নিজের কাছের মানুষটি থাকলে তো কোন কথাই নেই । আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেখতে পাবেন মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের ।
সাজেক ভ্যালি কখন যাবেন
অতুলনীয় সাজেকের রূপ । সারা বছরই অপরূপ সাজে সেজে থাকে সাজেক । বছরের যে কোন সময় আপনি সাজেক ভ্রমণ করেত পারবেন । তবে মেঘের খেলা বেশি দেখতে চাইলে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে যাইতে পরেন । তাই এই সময়টাই সাজেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময় মনে করা যেতে পারে ।
সাজেক ভ্যালি - Sajek Valley ভ্রমনের সময় যে গুলো মনে রাখতে হবে
* সাজেকে কোন বিদ্যুত নেই , তাই সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক রাখতে পারেন । কেননা সোলার ব্যবস্থায় চার্জ হতে অনেক সময় লাগবে ।
*টেলিটক ও রবি সিম সাথে রাখতে পারেন । কেনা না এই দুইটা সিম এর নেটই এখানে ভালো পাওয়া যায় ।
*সাজেকে যাওয়ার সময় গাড়ি ছাদে বসে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন । যদিও ছাদ থেকে চারপাশের সৌন্দয্য অবলোকন করা যায় ভালো ভাবে ।
* সাজেক আদিবাসীদের তোলার ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নেয়ে নিন ।
* সাজেক যাওয়ার জন্য কোন গাইডের প্রয়োজন হয় না ।
* ছুটির দিনগুলোতে সাজেকে ভিড় হয় একটু বেশি তাই এই সময় আসলে অবশ্যই হোটেল গুলো অগ্রিম ভূকিং দিয়ে আসা বুদ্ধি মানের কাজ ।
* সাজেকে যাওয়ার পথে আপনার পরিচয় পত্র সাথেই রাখুন এবং এর কয়েকটি কপি করে ব্যাগে রেখে দিন ।
সাজেক ভ্যালির রিসোর্ট ও কটেজ
*রিসোর্ট রুংরাং
*সাজেক রিসোর্ট
*রুন্ময় রিসোর্ট
*মেঘ পুন্জি রিসোর্ট
*লুসাই কটেজ
*আলো রিসোর্ট
সাজেক ভ্যালি ছবি
সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটক স্থান । এর নয়নভিরাম সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করে । সাজেক ভ্যালিকে উৎসহ নিয়ে যে একবার দেখতে যায় সেই এর প্রেমে পড়ে বসে । আর এর প্রেমের টানে যখনই কাজের থেকে মুক্তি মিলে তখনই দলে দলে এখানে ছুটে আসে বার বার । নিচে কয়েকটি সাজেক ভ্যালি ছবি দেওয়া হলো ।
সাজেক ভ্যালির ছবি -১
সাজেক ভ্যালির ছবি -২