কারক কাকে বলে - কারক কত প্রকার কি কি এবং কারক নির্নয়ের স্পেশাল কয়েকটি মাধ্যম নিচে আলোচনা করা হলো _
কারক |
কারক কাকে বলে
বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়াপদের সাথে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের যে সম্বন্ধ থাকে, তাকে কারক বলে । এ সম্বন্ধ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। নিচের বাক্যটিকে বিশ্লেষণ করা যাক।
প্রতি শুক্রবারে আব্বা ভান্ডার থেকে স্বহস্তে ভিক্ষুকদের চাল বিতরণ করেন।
কে বিতরণ করেন ? - আব্বা ( কর্তৃ সম্বন্ধ )
কি বিতরণ করেন ? - চাল ( কর্ম সম্বন্ধ )
কি দ্বারা বিতরণ করেন ? - স্বহস্তে ( করণ সম্বন্ধ )
কাকে বিতরণ করেন ? - ভিক্ষুকদেরকে ( সম্প্রদান সম্পর্ক )
কোথা থেকে বিতরণ করেন ? - ভান্ডার থেকে ( অপাদান সম্পর্ক )
কখন বিতরণ করেন ? - শুক্রবার ( অধিকরণ সম্পর্ক )
বাংলায় কারক ছয় প্রকার । যথা :-
১. কর্তৃ কারক
২. কর্ম কারক
৩. করণ কারক
৪. সম্প্রদান কারক
৫. অপাদান কারক
৬. অধিকরণ কারক
কর্তৃ কারক
যে কাজটি করে, তাকে কর্তা বলে । যেমন- পাখি ডাকছে । কে ডাকছে ? পাখি । এখানে 'পাখি' কর্তা অর্থাৎ 'পাখি' অন্যের অধীন না হয়ে 'ডাকছে' ক্রিয়া সম্পাদান করছে ।
অতএব, যে বিশেষ্য বা সর্বনাম অন্যের অধীন না হয়ে কোন কার্য সম্পাদান করে, সেই মূখ্য কর্তাকে কর্তৃ কারক বলে । উদাহরণ :-
শিক্ষক ব্যকরণ পড়ান । - কর্তৃ কারকের শূন্য বিভক্তি ।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দিব কিসে ? - কর্তৃ কারকের সপ্তমী বিভক্তি ।
কর্ম কারক
ক্রিয়ার বিষয়কে কর্ম বলে । যথা :- তিনি বালকটিকে প্রহার করেন । বাক্যে 'কাকে' ? প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় 'বালকটিকে' । অতএব 'বালকটিকে' কর্ম কারক ।
অতএব, বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ এই 'কর্ম' অর্থাৎ ক্রিয়ার বিষয়কে বুঝায়, তাকে কর্ম কারক বলে । উদাহরণ :-
গরু ঘাস খাই । - কর্ম কারকের শূন্য বিভক্তি ।
বাবা আমাকে একটি কলম দিয়েছেন । - কর্ম কারকের দ্বিতীয়া বিভক্তি ।
করণ কারক
কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদান করে, তাকে করণ কারক বলে । যথা :- সে ছিপ দ্বারা মাছ ধরে । 'কি দ্বারা' ? প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যাবে 'ছিপ দ্বারা' । অতএব 'ছিপ দ্বারা' করণ কারক ।
অতএব, বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম ক্রিয়া সাধনের এরুপ উপায়কে বোঝায়, তাকে করণ কারক বলে । উদাহরণ :-
সে কানে শুনে না । - করণে সপ্তমী বিভক্তি।
লাঠি দ্বারা সাপ মার । - করণে ৩য়া বিভক্তি।
সম্প্রদান কারক
যাকে কোন বস্তু দান করা যায়, তার সম্প্রদান কারক হয়। যথা:- দারিদ্রকে ধন দাও। তৃষ্ণার্তকে পানি দাও ।
দ্রষ্টব্য :- স্বত্বত্যাগ করে কোন বস্তু দান না করলে সম্প্রদান কারক হয় না । যথা :- ধোপাকে কাপড় দাও। এখানে 'ধোপাকে' কর্ম কারক, সম্প্রদান কারক নয় ।
সম্প্রদান কারকের উদাহরণ :-
সৎপাত্রে কন্যা দাও । - সম্প্রদানে ৭মী বিভক্তি ।
ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও । - সম্প্রদানে চতুর্থী বিভক্তি ।
অপাদান কারক
যা থেকে কোন বস্তু চলিত, ভীত, গৃহীত, উৎপন্ন, রক্ষিত, ও আরম্ভ হয় তাকে অপাদান কারক বলে ।যথা :-
চলিত- বৃক্ষ থেকে ফল পড়ে ।
ভীত- মানুষ সর্প থেকে ভয় পায় ।
গৃহীত- বালিকা নদী থেকে পানি আনে ।
উৎপন্ন- বীজ থেকে অংকুর উৎপন্ন হয় ।
রক্ষিত- আল্লাহ্ বিনা কে বিপদ থেকে রক্ষা করবে ?
আরম্ভ- বাল্যকাল থেকে শিক্ষারম্ভ করবে।
অপাদানে ৫মী বিভক্তি হয় । অন্যান্য বিভক্তিও হয় । যেমন :-
সে তোমাকে ভয় পায় । - অপাদানে ২য়া বিভক্তি ।
তার চোখ দিয়ে জল পড়ে । - অপাদানে ৩য়া বিভক্তি ।
সুন্দর বনে বাঘের ভয় আছে । - অপাদানে ষষ্ঠী বিভক্তি ।
অধিকরণ কারক
ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণ কারক বলে । আধার অর্থ থাকার স্থান । যে স্থানে, যে সময়ে বা যে বিষয়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, সে স্থান, সে সময় বা সে বিষয়ই ক্রিয়ার আধার । যথা:- পানিতে মাছ থাকে । এখানে 'পানি' মাছ থাকার স্থান ; রাত্রিকালে চাঁদ উঠে । এখানে 'রাত্রিকাল' চাঁদ উঠার সময়; পাঠে মন দাও । এখানে 'পাঠে' মন দেওয়ার বিষয় ।
অধিকরণ কারক আবার তিন প্রকার :-
১/ কালাধিকরণ
২/ ভাবাধিকরণ
৩/ আধারাধিকরণ
কালাধিকরণ :- যে সময়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়, সে সময়কে কালাধিকরণ বলে । যেমন- বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়।
ভাবাধিকরণ :- যে বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়,সে বিষয়কে ভাবাধিকরণ বলে। যেমন- ছেলেটি অংকে কাঁচা। আবার এক ক্রিয়ার কালের উপর অন্য ক্রিয়ার কাল নির্ভর করলেও ভাবাধিকরণ হয়।যেমন- বসন্তাগমনে বৃক্ষগুলো নবপল্লব ধারণ করা ।
আধারাধিকরণ :- যে স্থানে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, সে স্থান ক্রিয়ার আধার এবং সে স্থানকে আধারাধিকরণ বলে। যেমন- নদীতে মাছ আছে ।
আধারাধিকরণ আবার তিন ভাগে বিভক্ত ।যথা:- ঐক্যদেশিক, অভিব্যাপক, বৈষয়িক।